নতুন প্রজন্মের প্রেরণা রাবির ‘শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা’
অনুধ্যান প্রতিবেদক
অনুধ্যান
প্রকাশিত : ১০:০৮ পিএম, ২ মার্চ ২০১৭ বৃহস্পতিবার

শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালার প্রধান ফটক
দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক জাদুঘর ‘শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা’য় সংরক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত এই সংগ্রহশালা ঘুরে আসতে পারেন আপনিও।
উত্তরাঞ্চলের সর্বোচ্চ জ্ঞানপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক স্বয়ংসম্পূর্ণ জাদুঘর ‘শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা’। এখানে স্থান পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের হাজারো স্মৃতি নবীন শিক্ষার্থীদের দেখায় আলোর পথ। তরুণপ্রাণে সঞ্চারিত হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
বহু প্রাণ আর ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের এ বাংলা। সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত জিনিসপত্র দেখে দর্শনার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে, বিষ্মিত হয় । প্রাণ ভরে ওঠে এ দেশের ইতিহাস নিয়ে। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারির শহীদ মিনারের বাঁধাইকৃত আলোকচিত্র, আমতলার সভা, কালো পতাকা উত্তোলন ও মিছিলের ছবি অজান্তেই নিয়ে যায় সেই পুরোনো দিনগুলোতে।
যা যা আছে সংগ্রহশালায়
শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালাটি চমৎকার স্থাপত্যনৈপূণ্যে সমৃদ্ধ মোট ৬ হাজার ৬শ বর্গফুট আয়তনের তিনটি গ্যালারি নিয়ে গড়ে উঠেছে। খুবই ক্ষুদ্রপরিসরে সংগ্রহশালাটি যাত্রা শুরু করলওে সংগ্রহের দিক থেকে পর্যায়ক্রমে মুক্তিযুদ্ধের একটি পূর্ণাঙ্গ সংগ্রহশালায় পরিণত হয়। ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন চিত্রকর্ম, দলিল-দস্তাবেজ, আলোকচিত্র, জামা, জুব্বা, কোট, ঘড়ি, পোশাক, টুপি, কলমসহ বিভিন্ন দুর্লভ জিনিস এখানে স্থান পেয়েছে।
প্রথম গ্যালারিতে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদ ড. শামসুজ্জোহার বিভিন্ন ছবি, ব্যবহৃত জিনিসপত্র। মু্ক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন পোশাক। এছাড়াও রয়েছে ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের আলোকচিত্র, শহীদ আসাদের কিছু দুর্লভ ছবি, বিভিন্ন শিল্পীর আঁকা মুক্তিযুদ্ধের ছবি, ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারিতে নির্মিত রাজশাহীর প্রথম শহীদ মিনারের ছবি। রাজশাহীতে উত্তোলিত প্রথম জাতীয় পতাকাটিও সংরক্ষিত আছে এখানে।
সশহীদ বুদ্ধিজীবীদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও পোশাক, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন প্রতীকী ভাস্কর্যও রয়েছে দ্বিতীয় গ্যালারিতে। আরও রয়েছে সাতজন বীরশ্রষ্ঠের ছবি।
রাজশাহীর শহীদ সিদ্ধার্থ সেন, ডা. মিহির কুমার সেন, ডা. হুমায়ুন কবির, অ্যাডভোকেট নাজমুল হক সরকারসহ আরও অনেকের ছবি । একাত্তরের পাকস্তিানী হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের কিছু দুর্লভ ছবিও এই গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে ।
তৃতীয় গ্যালারিতে রাখা হয়েছে একাত্তরে গণহত্যায় নিহত অসংখ্য শহীদের মাথার খুলি আর হাড়। যার বেশির ভাগই উদ্ধার করা হয়েছে জোহা হলের পাশে অবস্থিত গণকবর থেকে । গ্যালারির একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন ঐতিহাসিক আলোকচিত্র । রয়েছে একাত্তরে হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের বিভিন্ন আলোকচিত্র ও বিজয়ী মুক্তিসেনাদের ছবি ।
স্বাধীনতা যুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতি ও ঐতিহাসিক উপকরণ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৭৬ সালের ৬ মার্চ তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা আবুল ফজল আনুষ্ঠানিকভাবে এই সংগ্রহশালাটি উদ্বোধন করেন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তিন শিক্ষকের সহধর্মিনী বেগম ওয়াহিদা রহমান, বেগম মাস্তুরা খানম ও শ্রীমতি চম্পা সমদ্দার এর তিনটি প্রদর্শণী গ্যালারি উদ্বোধন করনে ১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি।
যেভাবে যাবেন
অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা দেখতে চাইলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনি বাস ও ট্রেন- দুইভাবেই আসতে পারেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে এগোলেই দেখা যাবে প্রশাসনিক ভবন, এখান থেকে ডানদিকে দুই মিনিট হাটলেই দেখতে পাওয়া যাবে শহীদ মিনার। এর পাশেই অবস্থিত শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা।
শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালাটি প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বলো ২টা র্পযন্ত খোলা থাকে। দেশের প্রথম শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালাটি দর্শন করতে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক দর্শনার্থী আসেন। আমেরিকা, জাপান, ভারত, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়াসহ পৃথিবীর অনেক দেশের দর্শনার্থী এখানে ঘুরে গেছেন। আপনিও আমন্ত্রিত।
মো. শাফিউল ইসলাম ও মো. গোলাম মোস্তফা
১৩ আগষ্ট ২০১৬
আরো দেখুন